আপনার পিসি ফাস্ট করার অতিগুরুপ্তপুর্ন কার্যকারী টিপস

এই আধুনিক যুগে সার্বক্ষণিক প্রয়োজনে আমরা নির্ভরশীল আমাদের কম্পিউটারটির উপর – সকালে বা বিকালে, রাতে-বিরাতে, সময়ে কি অসময়ে! আর অপরিহার্য এই প্রয়োজন, এই কম্পিউটারটি যখন বেশ কিছু সময় ব্যবহারের ফলে বা কোন কারনে স্লো পারফর্ম করে, তা বিরক্তির কারন হয়ে দাড়ায় যে কারোই।
 প্রথমে জেনে নেয়া প্রয়োজন আপনার কম্পিউটারকে ধীর করে দেয়ার পিছনে সাধারনত কি কি কারণগুলো দায়ী :
  • দুর্বল Processor এবং অপর্যাপ্ত RAM
  • Bad Sector সহ হার্ডডিস্ক
  • অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইন্সটল করে RAM ও হার্ডড্রাইভ অতিরিক্ত ভারী করে রাখা
  • কম্পিউটার যদি ভাইরাস, ট্রোজান ও স্পাইওয়ার দ্বারা আক্রান্ত হয়
  • অ্যান্টি-ভাইরাস ও ভুল ডিভাইস ড্রাইভার ইন্সটল্ড থাকা
এই টিপিক্যাল কারণগুলো সচরাচর পিসিকে স্লো করে দেয়, তবে কিছু জটিলতর সমস্যাও এর জন্য দায়ী হতে পারে। তবে, এই সাধারন সমস্যাগুলো কিভাবে ডিল করবেন, কিভাবে সমাধান করে পিসিকে ফাস্ট করবেন তা জেনে নেওয়াটাও জরুরী। খুব অ্যাডভান্সড কোন উপায় নয়, কিছু সহজ উপায়ে কিভাবে পিসিকে আরও ফাস্ট করবেন তা জেনে নিন –

১) হার্ডডিস্ক ডিফ্র্যগ করুন
হার্ডডিস্ক স্লো হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার পিসির গতি কমে যাবে। হার্ডডিস্কে বিভিন্ন রকমের কারনে ফ্রাগ্মেন্ট হতে পারে। এই ফ্রাগ্মেন্ট পরিমানে বেরে গেলে আপনার হার্ডডিস্কের স্পীড কমিয়ে দেবে। কপি, পেস্ট, রিমুভ ইত্যাদি করা হলে হার্ডডিস্কে ফ্রাগ্মেন্ট জমা হতে থাকে এবং ডিফ্র্যগ না করলে এগুলো পরিমানে বেড়ে যায় এবং হার্ডডিস্কের গতি কমিয়ে দেয়। ডিফ্র্যগ করার জন্য আপনি ডিফ্র্যগলার নামের সফটওয়্যার ইউজ করতে পারেন। এটি একাধারে দুই তিনবার ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিবার কিছুটা হলেও স্পীড বাড়বে।


২) টেম্প, %টেম্প% ও প্রিফেচ ডিলিট করুন
এগুলো আপনার পিসির কিছু অপ্রয়োজনীয় ফাইল, এগুলো আপনার পিসিকে স্লো করে দেবে। প্রতিবার কম্পিউটার শাটডাউন করার পূর্বে এগুলো ক্লিন করতে পারেন। এগুলো আপনি ম্যানুয়ালি বা সফটওয়্যারের সাহায্য ক্লিন করতে পারেন।
ম্যানুয়ালি ক্লিন করার পদ্ধতি ঃ উইন্ডোজ কি + R চেপে রান ওপেন করুন। রানে Temp লিখে এন্টার চাপুন। একটি ফোল্ডার ওপেন হবে, ফোল্ডারের সকল ফাইল মার্ক করে ডিলিট করে দিন। একইভাবে %Temp% ও Prefetch লিখে এন্টার চাপুন এবং ফাইলগুলো ডিলিট করুন।
সফটওয়্যারের সাহায্যে ক্লিন করার পদ্ধতি ঃ ATF Cleaner নামে একটি ফ্রি সফটওয়্যার রয়েছে। এটি মাত্র ৫০ কেবির মতো সাইজ, গুগলে সার্চ করলে ডাউনলোড লিঙ্ক পেয়ে যাবেন। এটি ব্যবহার করা খুবি ইজি, মনে হয়না কারো ইউজ করতে প্রবলেম হবে, তাই এ বিষয়ে আর লিখলাম না। তাও বুঝতে না পারলে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

৩) প্রতিনিয়ত জাঙ্ক ফাইল ও রেজিস্ট্রি ক্লিন করুন
যারা কম্পিউটার ব্যবহার করেন তাদের প্রায় সকলেই এ কাজটি কমবেশি করেই থাকেন। কম্পিউটার ক্লিন করলে আপনার কম্পিউতারের জাঙ্ক ফাইলগুলো দূর হবে এবং আপনার পিসির গতি বজায় থাকবে। এ কাজের জন্য রেজিস্ট্রি ক্লিন করলে উইন্ডোজের লোড কমবে, স্পীড বাড়বে, উইন্ডোজ ক্রাশ হওয়া থেকে বাঁচবে। এসকল কাজের জন্য সি-ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন।

৪) অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার আনইন্সটল করুন
সকলেই জানেন যে সফটওয়্যার বেশি ইন্সটল দেয়া হলে উইন্ডোজ অটোমেটিক স্লো হয়ে যায়। তবুও হয়তো অনেকে মাঝে মাঝে বিষয়টি চেক করতে ভুলে যান, আপনিও যদি তাই করে থাকেন তাহলে আরেকবার চেক করে দেখুন, হয়তো এমন অনেক সফটওয়্যার পেয়ে যাবেন যা আপনি একেবারেই ব্যবহার করেননা।
৫) সিস্টেম ড্রাইভ ক্লিন করুন
সিস্টেম ড্রাইভ ক্লিন করতে উইন্ডোজ কি + R চেপে রান ওপেন করে তাতে cleanmgr লিখে এন্টার চাপুন। এরপরের উইন্ডোটিতে ওকে চাপুন। এর কিছুক্ষণ পর এরকম দেখতে একটা উইন্ডো আসবে। উইন্ডোর লিস্টের সবগুলো ফাইল টিক মার্ক করুন এবং ওকে চাপুন। তারপরের উইন্ডোতে ডিলিট ফাইল্স  ক্লিক করুন। ব্যস কাজ শেষ, বাকি কাজ কম্পিউটারই করে নেবে।
৬) অপ্রয়োজনীয় উইন্ডোজ সার্ভিসগুলো ডিজেবল করে দিন
রান ওপেন করে তাতে services.msc লিখে এন্টার চাপুন, এরপরের উইন্ডোতে অনেকগুলো সার্ভিসের লিস্ট দেখতে পাবেন। যেগুলো বন্ধ করে দিতে পারেন।
বন্ধ করার জন্য যে সার্ভিসটি বন্ধ করতে চান তার ওপর রাইট মাউস ক্লিক করুন, তারপর প্রপার্টিজ এ গিয়ে “Startup Type” কে Disabled করে দিন। এরপর অ্যাপ্লাই করে বেরিয়ে আসুন। এরপর পিসিকে একবার রিস্টার্ট করতে হবে। ব্যাস কাজ হয়ে যাবে।

এছাড়াও বিভিন্ন সফটওয়্যারের আপডেট আপনি এখান থেকে বন্ধ করে দিতে পারেন।
৭) পোর্টেবল সফটওয়্যার ব্যবহার করুন
পোর্টেবল সফটওয়্যার ব্যবহার করলে আপনার উইন্ডোজের উপর চাপ কম পরবে, তাই চেষ্টা করুন পোর্টেবল সফটওয়্যার ব্যবহার করার।
৮) লাইট অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন
পেন্ড্রাইভের শর্টকাট ভাইরাসের জন্য SMADAV এবং অনলাইন সিকিউরিটির জন্য Malwarebytes ব্যবহার করতে পারেন। Avast, Kaspersky, Norton, Bitdefender এগুলো অনেক হেভি সফটওয়্যার তাই এগুলো বেশি  মেমোরি (RAM) ব্যবহার করবে এবং তাছাড়াও প্রসেসরের চাপ বাড়িয়ে দিয়ে আপনার পিসিকে স্লো করে দেবে।
৯) উইন্ডোজ স্টার্টাপ ফাস্ট করুন
স্টার্টাপ ফাস্ট করা অর্থাৎ আপনার পিসির বুট টাইম বুস্ট করতে রানে গিয়ে MSCONFIG লিখে এন্টার চাপুন। এরপর Boot ট্যাব-এ যান এবং Advanced Options…–এ ক্লিক করুন। এরপর Number of processors-এ টিক দিয়ে নিচ থেকে ম্যাক্সিমাম সংখ্যাটি সিলেক্ট করুন। এরপর ওকে চাপুন এবং তারপর অ্যাপ্লাই করুন। এরপর পিসি রিস্টার্ট করতে হবে।
১০) আপনার ড্রাইভার আপডেট করুন
আপনার ড্রাইভারগুলো ২-৩ মাস এর মধ্যে আপডেট করার চেষ্টা করুন, এতে আপনি আপনার হার্ডওয়্যার থেকে ফুল পারফর্মেন্স পাবেন। ইন্টারনেট ডেটায় টান পরলে, ড্রাইভার ডাউনলোড করে আপডেট না করে দোকান থেকে ৪০ টাকার ড্রাইভার ডিস্ক কিনে আনতে পারেন।
১১) ট্রি করুন
রান ওপেন করে তাতে tree টাইপ করে এন্টার চাপুন। এতে করে আপনার পিসিতে যেসকল সফট-ড্রাইভ রয়েছে সেগুলোকে উইন্ডোজ ক্যাশে করে নেবে, ফলে পড়ে ফোল্ডারের থাম্বনেইল ও অন্যান্য আইকন লোড হতে সময় কম লাগবে। প্রতিবার পিসি স্টার্ট করার পর ১-২ বার ট্রি করে নিতে পারেন।
ল্যাপটপ/নেটবুক এর ব্যাটারির যত্ন নেয়াঃ ব্যাটারি হচ্ছে ল্যাপটপ/নেটবুক এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট।মূলত এই ব্যাটারির সাথে ল্যাপটপের অন্য কম্পোনেন্টগুলোর যোগসুত্র আছে।তাই একটি নষ্ট হলে আরেকটি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে।তাই ল্যাপটপের ব্যাটারির যত্ন নিতে হবে।ল্যাপটপ যদি আপনি ১/২ মাসের জন্য বন্ধ রাখেন তাহলে এর ব্যাটারিটা খুলে রাখবেন।আর প্রথমবার ল্যাপটপ কেনার পরই ল্যাপটপ বন্ধ করে ফুল চার্জ দিবেন।এতে ব্যাটারিটা ভালো থাকবে।আর অনেকে আছেন যারা ল্যাপটপের চার্জ শেষ হয়ে যাবে এই ভয়ে সারাক্ষণ এতে চার্জ দিয়ে রাখেন।এতে ল্যাপটপের ব্যাটারির পাশাপাশি হার্ডডিস্কও নষ্ট হতে পারে।তাই এটা কখনই করা উচিৎ না।ল্যাপটপের ব্যাটারির কেয়ারের জন্য ফ্রি অনেক সফটওয়্যার আছে।আমি আপনাদের একটা দিলাম।ব্যাবহার করে দেখেন কেমন লাগে।

আমার পার্সোনাল মতামতঃ

পিসি ডেস্কটপে সবসময় কম শর্টকাট রাখার চেষ্টা করবেন।আর যদি বেশি বেশি সফটওয়্যার ইন্সটল দেয়ার ফলে অনেক শর্টকাট ডেস্কটপে এসেই পরে সেক্ষেত্রে একটা ফোল্ডার বানান।যে প্রোগ্রামগুলো সচরাচর ইউজ করবেন সেটা ডেস্কটপে রাখুন আর যেগুলো মাঝে মাঝে করবেন সেগুলো ঐ ফোল্ডারের মধ্যে রাখুন।
২।অনেককেই দেখা যায় টাস্কবারে ৪/৫টা অ্যাপ্লিকেশন পিন করে রেখেছেন।এটা করা উচিত নয়।কারণ এগুলো প্রচুর মেমোরি খায়।আর যদি আপনার কম্পিউটার লো কনফিগারেশনের হয়ে থাকে তাইলে তো বেহাল অবস্থা হয়ে যাবে।
 

Rangpur Today
Related Posts
Previous
« Prev Post