গুগলে চাকরি পাওয়ার উপায় জানালেন গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)



গুগলে কীভাবে চাকরি পাওয়া যাবে তা জানিয়েছেন গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুন্দর পিচাই। এ ছাড়া গুগলে চাকরির সাক্ষাৎকার দেওয়ার দিনের অভিজ্ঞতায় বর্ণনা করে বলেছেন, জি-মেইল সম্পর্কে তিনি ওই সময় জানতেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের খড়গপুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আইআইটি) ছাত্র-ছাত্রীদের গল্পে এমন নানান কথাই বলেছেন ক্রিকেটার হতে চাওয়া বর্তমান গুগলের সিইও।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, গুগলে ইন্টারভিউ দেওয়ার দিনে ‘জি-মেইল’ জিনিসটা কী জানতেনই না সুন্দর পিচাই। সাক্ষাৎকার বোর্ডের এক সদস্যের প্রশ্নে পিচাই ভেবেছিলেন, ‘জি-মেইল’ শব্দটি বলে বোধ হয় তাঁকে ‘এপ্রিল ফুল’ বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সুন্দর পিচাইয়ের সাক্ষাৎকারের দিনটা ছিল ২০০৪ সালের পয়লা এপ্রিল। ওই দিনই গুগলের ই-মেইল সেবা জি-মেইল চালু হয়েছে। তাই জি-মেইল সম্পর্কে জানার সুযোগ পাননি পিচাই।
এদিন পিচাই আইআইটির শিক্ষার্থীদের বললেন, সহজে গুগলের চাকরি পাওয়া যায়। গুগল তোমাদের দোরগোড়ায় আসবে। পিচাই শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান, ‘তোমরা কি কেউ গুগলে চাকরি করতে চাও? হাত তোল।’ সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা প্রায় সবাই হাত তোলেন। পিচাই জানালেন, খড়গপুর আইআইটির শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে গুগলের চাকরি লুফে নিতে পারেন, তার জন্য আইআইটির ক্যাম্পাসেই গুগলের একটি সেন্টার খুলতে পারেন তিনি। এর ফলে, চাকরি পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের আর গুগলের দরজায় কড়া নাড়তে হবে না। গুগলই শিক্ষার্থীদের কাছে চলে আসবে।

এখন মনে হতে পারে ‘জি মেইল’ কী তা না জেনে গুগলের সিইও হতে কীভাবে তিনি চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে যান? ২০০৪ সালে গুগলের সাক্ষাৎকার বোর্ডের সদস্যরা অবাক হয়েছিলেন। গুগলের সিইও হতে সুন্দর পিচাইকে ১০টি সাক্ষাৎকার দিতে হয়েছে। চার নম্বরে সাক্ষাৎকারে ভারতীয় এই সিইওকে কেউ ‘জি-মেইল’ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেননি। পঞ্চম দফার সাক্ষাৎকারে বোর্ডের এক সদস্য পিচাইকে প্রশ্ন করেন, ‘জি মেইল কেমন হচ্ছে?’ পিচাই প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে যান। ওই সময় তিনি ভেবেছিলেন ‘এপ্রিল ফুল’ বানানো হচ্ছে তাঁকে। ‘জি-মেইল’ সেবার খবর পিচাই জানতেন না। এর পরে অবশ্য ‘জি-মেইল’ সম্পর্কে জেনে যান তিনি। পরের দফার সাক্ষাৎকারে ‘দেখেছি’ বলেন তিনি। কিন্তু এর পরের তিনি দফা অর্থাৎ সপ্তম থেকে দশম পর্যন্ত সাক্ষাৎকারে বোর্ডের সদস্যদের চমৎকার সব উত্তর দিয়ে অবাক করে দেন পিচাই। কারণ এসব সাক্ষাৎকারে সুন্দর পিচাই ‘জি-মেইল সেবার উন্নতি কীভাবে করা যায় তার পথ বাতলে।

আইআইটির সাবেক শিক্ষার্থী সুন্দর পিচাই বর্তমানে গুগলের সিইও। খড়গপুরে শিক্ষার্থীদের বলেছেন, তাঁর দশ দফার সাক্ষাৎকারে এক বারও গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারী পেজের সঙ্গে দেখা হয়নি। আবেগতাড়িত সুন্দর পিচাই গতকাল বলে ফেললেন তার আইআইটিতে কাটানো দিনগুলোর কথা। ভাষা-সমস্যায় কারণে একজনকে সম্ভাষণ করতে গিয়ে হিন্দিতে তিনি বলেছিলেন ‘আব্বে শালে’। তার সহপাঠী আইআইটির কেমিক্যাল প্রকৌশলীর শিক্ষার্থী অঞ্জলির প্রেমে পাগল হওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। অঞ্জলি এখন সুন্দর পিচাইয়ের স্ত্রী।

সুন্দর পিচাই মেটালারজিতে আইআইটি থেকে বি-টেক ডিগ্রি পাওয়ার পরে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমএস করেছেন। এরপর পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রি নেন তিনি।

চলুন তাহলে, দেখে নেওয়া যাক গুগলের কিছু প্রাথমিক যোগ্যতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

১. প্রোগ্রামিং শেখা: অন্তত একটি প্রোগ্রামিং ভাষায় থাকতে হবে কাজে লাগানোর মত জ্ঞান। হতে পারে সেটি পাইথন কিংবা সি, হতে পারে সি++। অনলাইনেও এসব প্রোগ্রামিং ভাষা শেখার অনেক সুযোগ আছে।
২. কোড পরীক্ষা করে ত্রুটি বের করা: কেবল কোডিং করা জানলেই চলবে না, কোড লিখার পর সেটিকে বাস্তবে প্রয়োগ করে সেখানে থাকা ত্রুটি বের করার ক্ষমতাও থাকতে হবে।
৩. গণিত সম্পর্কে ধারণা: গণিতের বিভিন্ন শাখা যেমন- বিচ্ছিন্ন গণিত বিষয়ে থাকতে হবে কাজ চালিয়ে নেওয়ার মত জ্ঞান। কারণ প্রোগ্রামিং বিষয়ে রয়েছে গণিতের বিস্তর ব্যবহার।
৪. অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করা: অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করার আগ্রহ থাকতে হবে। কারণ যেকোনো কাজেই ব্যবহার করতে হবে কোন না কোন অপারেটিং সিস্টেম।
৫. কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে ধারণা: গুগলের অত্যন্ত পছন্দের একটি বিষয় রোবট। আর তাই রোবট বিষয়ে ধারণা এবং জানার আগ্রহ থাকতে হবে।
৬. অ্যালগরিদম এবং ডেটা স্ট্রাকচার: গুগল নানা ধরণের ডেটা টাইপ এবং ডেটা স্ট্রাকচার নিয়ে কাজ করে। আর তাই সেখানে কাজ করতে আগ্রহী একজন তরুণের কাছেও এই বিষয়ে বিশদ জ্ঞান আশা করে প্রতিষ্ঠানটি।
৭. ক্রিপ্টোগ্রাফি: সাইবার নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তাই গুগলে কাজ করতে চাইলে ক্রিপ্টোগ্রাফি বিষয়ে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।
৮. কম্পাইলার তৈরি করা: স্ট্যানফোর্ডের মতে, যখন আপনি একটি কম্পাইলার তৈরি করতে পারবেন, তখন আপনি জানতে পারবেন কিভাবে একটি হাই লেভেল প্রোগ্রামিং ভাষা লো-লেভেল প্রোগ্রামিং ভাষায় পরিণত হয়।
৯. অন্য প্রোগ্রামিং ভাষার উপর দক্ষতা অর্জন: আপনি যে প্রোগ্রামিং ভাষায় দক্ষ, সেটির পাশাপাশি অন্য প্রোগ্রামিং ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা জরুরী, অন্তত গুগলে চাকুরী পেতে হলে।
১০. প্যারালাল প্রোগ্রামিং: একইসাথে একাধিক প্রোগ্রামিংয়ের কাজ চালিয়ে নিতে পারা বাড়তি দক্ষতা হিসেবেই বিবেচনা করা হয় গুগলে।

Rangpur Today
Related Posts
Previous
« Prev Post